গাভী পালন একটি লাভজনক ব্যবসা ও পেশা। আমাদের দেশে চাহিদার মাত্র শতকরা ১৩.৫৮ ভাগ দুধ উৎপাদিত হয়। সে অনুযায়ী দেশে বছরে প্রায় ৮.৫২ মিলিয়ন মেট্রিক টন দুধের ঘাটতি রয়েছে যার কিছুটা বিদেশ থেকে গুড়া দুধ আমদানী করে পূরণ করা হয়। তাই দেশে দুধের ঘাটতি থাকায় গ্রাম অঞ্চল থেকে শহর ও শহরতলীতে অনেকেই গাভী পালন করছেন। এক্ষেত্রে যুব উন্নয়ন পরিদপ্তর দেশে বেকার শিক্ষিত যুবকদের স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণ দিয়ে গাভী পালনে উদ্বুদ্ধ করে আত্মনির্ভরশীল করছে। বর্তমানে সমগ্র বাংলাদেশে গাভীর কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি সম্প্রসারনের ফলে প্রচুর সংকর জাতের গাভী উৎপাদিত হচ্ছে। এসব উন্নত সংকর জাতের গাভী পারিবারিক বা ছোট ছোট খামার পর্যায়ে পালিত হচ্ছে। সুতরাং বেকার যুবক, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক নিজের বাড়িতে ২-৫টি গাভী পালনের মাধ্যমে আয়ের পথ করে নিতে পারে।
গবাদিপশুর বাসস্থান:
পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে গাভীর বাসস্থান বা আদর্শ মিনি ডেয়রী ফার্ম গড়ে তোলা প্রয়োজন যাতে কম খরচে অধিক লাভবান হওয়া যায়। ডেয়রী খামার বা পশুর বাসস্থান স্থাপনের পূর্বে নিম্নোক্ত বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
(ক) গাভীর বাসস্থান বা খামারের জন্য নির্ধারিত স্থানের মাটি শুষ্ক ও আশেপাশের জমি থেকে উঁচু হওয়া প্রয়োজন, যাতে বৃষ্টির পানি ও অন্যান্য বর্জ্য পর্দাথ না জমে সহজেই নিষ্কাশিত হতে পারে।
(খ) খামারের জন্য নির্ধারিত জমির মাটি মোটামোটি উর্বর, বালির ভাগ বেশী এবং শুষ্ক হওয়া প্রয়োজন। এতে বর্ষায় পানি জমে কর্দমাক্ত হবেনা।
(গ) গোশালায় যাতে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ বা চলাচল করে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ সূর্যের আলো সেসব ঘরকে একদিকে শুষ্ক রাখতে সাহায্য করে, অন্যদিকে রোগজীবাণু বাসা বাঁধতে পারেনা। তাই পূর্ব পশ্চিমে লম্বা দক্ষিণমুখী গোয়ালঘর আরামদায়ক।
(ঘ) গোয়াল ঘরের চারপাশে প্রচুর গাছপালা থাকা ঠিক নয়। অর্থাৎ কোন অবস্থায় যেন ঘরে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা না থাকে।
(ঙ) পশুর মলমূত্র ও গোশালয় আবর্জনা ঘরের ভিতর যাতে না জমে সেজন্য নির্গমনের নালা বা ড্রেনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কারণ পশুর মল-মূত্র, আবর্জনা জমে থাকলে পরিবেশ মশা-মাছি, পরজীবী ও অন্যান্য রোগ জীবাণুর উপদ্রবে দূষিত হবে। এইরূপ পরিবেশে পশু সহজেই রোগাক্রান্ত হয়।
(চ) পশুর মলমূত্র ও আবর্জনা দূরে গর্ত করে রাখতে হবে। সেগুলো পরে জমিতে সার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
(ছ) গবাদিপশুর পানের জন্য প্রচুর পরিমাণে পানির প্রয়োজন হয়। এছাড়া গোয়াল ঘর পরিষ্কার, গাভীর স্নান, ফার্মের যন্ত্রপাতি ও বাসনপত্র পরিষ্কার ও ঘাস উৎপাদনের জন্য প্রচুর পানি প্রয়োজন হয়। তাই অতি সহজে অল্প খরচে প্রচুর পরিমাণে পরিষ্কার বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
(জ) আধুনিক ডেয়রী ফার্মে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। বিদ্যুতিক শক্তিতে গভীর নলকূপের সাহায্যে ফার্মে পানি সরবরাহ, ফার্মের যন্ত্রপাতি চালানো ও ফার্মে রাতে আলোর ব্যবস্থার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ রয়েছে এমন অঞ্চলে ডেয়রী খামার স্থাপন সুবিধাজনক।
গবাদিপশুর বাসস্থান নির্মাণ:
পশুর গোশাল প্রধানত আবহাওয়া, ভৌগলিক অবস্থান, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য অবস্থার উপর ভিত্তি করে তৈরী করা হয়। তাই বিভিন্ন অঞ্চলে বা দেশের পশুর বাসগৃহ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যে কারণে সব অঞ্চল বা সবদেশেরই উপযোগী এমন কোন আদর্শ বাসগৃহ তৈরীর নকশা নাই। আমাদের দেশের জন্য উপযোগী প্রধানত দু’ধরনের গোশাল নির্মাণ করা যায়। যথা-(১) উদাম ঘর পদ্ধতি এবং (২) বাঁধা ঘর পদ্ধতি।
(১) উদাম ঘর পদ্ধতি:
(ক) এই পদ্ধতিতে বাচ্চা প্রসব ও দুধ দোহার সময় ছাড়া দিন ও
রাত্রি পশুকে দেয়াল বেষ্টিত খোলা জায়গায় পালন করা হয়।
তবে প্রতিকূল আবহাওয়ায় যেমন-ঝড়, বৃষ্টি, গরম, ঠান্ডা ইত্যাদির সময় পশুর নিরাপদ
আশ্রয়ের জন্য খোলা স্থান সংলগ্ন ঘর সংযুক্ত থাকে।
(খ) একটি গাভীর জন্য ৩.৫ বর্গমিটার আবৃতস্থান এবং ৭.০ বর্গমিটার খোলাস্থান আয়তনের মেঝের প্রয়োজন।
(গ) বয়স্ক বাছুর ও দুধ দিচ্ছেনা এমন গাভীর জন্য উদাম ঘর পদ্ধতি
সুবিধাজনক।
(ঘ) এই পদ্ধতির ঘরে প্রায় সব প্রজাতির পশুকে পালন করা যায়।
এইরূপ পশুর বাসগৃহ বাংলাদেশের প্রায় সকল অঞ্চলে ব্যবহার উপযোগী। তবে অধিক বৃষ্টিপাত ও গরম অঞ্চলের জন্য উদাম ঘর পদ্ধতির নকশা কিছুটা
হেরফের করার প্রয়োজন পড়ে।
(২) বাঁধা ঘর পদ্ধতি
এই পদ্বতির গোশালাকে প্রচলিত বলা হয় । এই পদ্বতিতে গরুর গলায় দড়ি বা লোহার জিঞ্জির
দিয়ে সীমাবদ্ব স্থানে বেঁধে পালন করা হয়। একই স্থানে গাভীর দুধ দোহন ও খাওয়ানো
সম্পূর্ণ করা হয়। সেজন্য গোশালা যাতে সহজে পরিষ্কার করা যায় এবং গাভী যাতে আরামে
থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখে গোশালা নির্মাণ করা প্রয়োজন ।